বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফারুক আহমেদ গত সাত মাসে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, যা দেশের ক্রিকেটের কাঠামোগত উন্নয়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা এবং কর্মপরিবেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। নিচে তাঁর এই সময়কালের প্রধান সাফল্যগুলো তুলে ধরা হলো:
ক্রিকেট কাঠামো ও প্রশাসনিক সংস্কার
বিসিবির আর্থিক অডিট ও দুর্নীতি প্রতিরোধ: দায়িত্ব গ্রহণের পর ফারুক আহমেদ বিসিবির আর্থিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে উদ্যোগী হন। তিনি সেরা চারটি অডিট ফার্মের মধ্যে থেকে একটি বেছে নিয়ে স্বাধীনভাবে বিসিবির আর্থিক কর্মকাণ্ডের অডিট শুরু করেন। এ ছাড়া, বোর্ড সভাপতির উপদেষ্টা হিসেবে একজন হিসাব নিরীক্ষক ও একজন আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন, এবং আরও তিনজন বিশেষজ্ঞ নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
স্টেডিয়াম প্রকল্প পর্যালোচনা: পূর্বাচলে প্রস্তাবিত শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয়বহুলতা বিবেচনায় নিয়ে তিনি এর টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করেন। পরবর্তীতে, ২০২৫ সালের মার্চে স্টেডিয়ামটির নাম পরিবর্তন করে ‘ন্যাশনাল ক্রিকেট গ্রাউন্ড’ রাখা হয়।
কর্মপরিবেশ ও মানবসম্পদ উন্নয়ন
কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি: বিসিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন সর্বোচ্চ ৫০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। যারা ২৫ বছর বা তার বেশি সময় ধরে চাকরি করছেন, তাদের বেতন ৫০% পর্যন্ত বেড়েছে; ১০ বছর বা তার বেশি সময় চাকরি করা কর্মীদের বেতন ২৫% পর্যন্ত এবং অন্যদের ৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
পে-স্কেল সংস্কার: ২০১৩ সালের পর প্রথমবারের মতো বিসিবির পে-স্কেল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা বর্তমান বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
ক্রিকেটীয় সাফল্য ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত
পাকিস্তান সিরিজে জয়: দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বাংলাদেশ জাতীয় দল পাকিস্তান সফরে গিয়ে সিরিজ জয়লাভ করে, যা নতুন সভাপতির অধীনে একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত।
কোচ হাথুরুসিংহের বিষয়ে ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত: ব্যক্তিগত মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, ফারুক আহমেদ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে দায়িত্বে বহাল রাখেন, যা দলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করেছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও টুর্নামেন্ট
আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন: আইসিসি ও এসিসির সভায় অংশগ্রহণ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করেছেন।
বিপিএল ও ক্লাব ক্রিকেটের স্থিতিশীলতা: বিপিএল ও ক্লাব ক্রিকেটের আয়োজন নিশ্চিত করতে ফ্র্যাঞ্চাইজি ও ক্লাবগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করেছেন, যাতে ঘরোয়া ক্রিকেটের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ
ফারুক আহমেদ বিসিবির প্রশাসনিক কাঠামো ও ক্রিকেট উন্নয়নে আরও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি মাঠ, কিউরেটর, কোচ, আম্পায়ার এবং ক্রিকেটারদের উন্নয়নে জোর দিচ্ছেন।
ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে বিসিবি গত সাত মাসে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, আর্থিক শৃঙ্খলা এবং ক্রিকেটীয় সাফল্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তাঁর এই পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে।
