অর্ধকোটি মানুষের জীবন রক্ষার লড়াই !
টানা ভারী বৃষ্টি ও বাঁধ খুলে দেওয়ায় ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা।
বন্যার পানিতে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর-ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
সেসব এলাকায় তৈরি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়। এসব জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। শুক্রবার পর্যন্ত ১৫ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী রয়েছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। এর আগে গতকাল শুক্রবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ
এবার হত্যা মামলার আসামি সাকিব আল হাসান!
ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান জানিয়েছিলেন
বন্যা মোকাবেলায় এ পর্যন্ত ৩ হাজার ১৬০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এক লাখ ৮৮ হাজার ৭৩৯ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য মোট ৬৩৭টি মেডিকেল
টিম চালু রয়েছে।
এদিন বন্যাকবলিত এলাকায় আবহাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে আবহাওয়াবিদ
মনোয়ার হোসেন জানান, সারা দেশেই কমবেশি বৃষ্টি হবে। চট্টগ্রাম বিভাগসহ
কিছু অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি ও অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীকাল
রোববার পর্যন্ত এ পরিস্থিতি থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে নদীবন্দরের জন্য ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
তারা বলছে, আজ সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজশাহী, ফরিদপুর,
মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা,
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে
ঝড় বয়ে যেতে পারে।
পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে, এমন স্টেশন ১১টি। সিলেটের বিয়ানীবাজার
উপজেলার শেওলা ইউনিয়নে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার,
শেরপুর-সিলেট অঞ্চলে ১০, মারকুলী এলাকায় ৭, মনু নদের মনু রেলওয়ে ব্রিজে ২৯,
খোয়াই নদের বাল্লা এলাকায় ১৯৯, হবিগঞ্জে ১৬৫, গোমতী নদী কুমিল্লায় ১১৯,
দেবীদ্বারে ৫৩, হালদা নদী নারায়ণহাটে ১১০ ও পাঁচপুকুরিয়া এলাকায় বিপৎসীমার ৩৭
সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ,
ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নি¤œাঞ্চলে বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতি
স্থিতিশীল রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও শঙ্কা কাটেনি।
আখাউড়ার সীমান্তবর্তী এলাকা জয়নগর দিয়ে ভারতের পাহাড়ি ঢলের পানি তীব্র
বেগে আসছে। মূলত উপজেলার হাওড়া নদীর ও আগরতলা সংযুক্ত আখাউড়া
ইমিগ্রেশনের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জাজিরা, কাটা ও কালন্দি খাল দিয়ে ভারত
থেকে পানি ঢুকছে।
তবে ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় সিলেটে নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। তবে এখনো
জেলার কুশিয়ারা নদীর চার পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেটে বৃষ্টিপাত খুব বেশি না হওয়ায় পানি কমতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত
জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভারতের উজান
থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যার শঙ্কা রয়েছে।
বন্যা আক্রান্ত জেলাসমূহের জেলা প্রশাসককে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক,
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে
এক সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে। ফেনী, নোয়াখালী,
চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর জেলার বন্যা উপদ্রুত
এলাকায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বিজিবি জেলা প্রশাসনের
সঙ্গে সমন্বয় করে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা এবং সচিবরা বন্যা পরিস্থিতি
পর্যবেক্ষণের জন্য বন্যা উপদ্রুত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। শ্রম ও
কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা আসিফ
মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বর্তমানে
উপদ্রুত এলাকায় অবস্থান করছেন বলেও জানানো হয়।
এবার উদ্ধারে সেনাবাহিনী ও কোস্ট গার্ড!
এদিকে দীর্ঘ ৮ দিন পর নোয়াখালীতে রোদের দেখা মিলেছে। ভাটায় পানি মেঘনা
নদীতে নামতে শুরু করলেও এখনো পানিবন্দি আছেন ২০ লাখ মানুষ। জেলা
আবহাওয়া অফিস বলছে, গত ১৬ আগস্ট থেকে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে
জলাবদ্ধতা বাড়ে এবং মুহুরী নদীর পানি প্রবেশ করায় তা বন্যায় রূপ নেয়।
শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, বৃষ্টি কমে আসবে এবং বন্যা
পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আজ সকালে কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদী হাসান
জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। উজানে বৃষ্টি কমেছে এবং
সেখানে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ভারতে পানি কমছে। এর প্রভাব দেশেও পড়বে।
১৮০০ মোবাইল টাওয়ার অচল : বন্যার কারণে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ
দেশের ১২ জেলায় প্রায় দুই হাজার মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে বলে
জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি। শুক্রবার
বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার
জেনারেল কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বন্যা
আক্রান্ত ১২টি জেলার ১২ হাজার ২৫০টি সাইট বা টাওয়ারের মধ্যে ১০ হাজার
৪৪৩টি সাইট সচল আছে। আর অচল হয়ে পড়েছে ১ হাজার ৮০৭টি।
বাংলাদেশে কোটা আন্দোলন- কোলকাতায় ধর্ষণ!
মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনীতে;
এই জেলায় ৯০ শতাংশের বেশি টাওয়ার অচল। এই এলাকার ৬৫৬টি টাওয়ারের
মধ্যে ৫৯০টিই অচল হয়ে গেছে। এছাড়া নোয়াখালীতে ৩৮০, লক্ষ্মীপুরে ৫৪,
কুমিল্লায় ৫৩৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৩, চাঁদপুরে ৪৭, চট্টগ্রামে ৭৫, খাগড়াছড়িতে
৩৬, হবিগঞ্জে ২, মৌলভীবাজারে ৩৯, সুনামগঞ্জে ১১ এবং রাঙামাটিতে
১৭টি টাওয়ার কাজ করছে না।
মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে বিটিআরসি জেনেছে- বন্যাকবলিত
অঞ্চলে অপারেটরদের টাওয়ার এলাকা ডুবে গেছে। এসব টাওয়ারে বিদ্যুৎ সংযোগও নেই।
অন্যদিকে তুমুল স্রোতে অন্যান্য প্রয়োজনীয় যান্ত্রিক সহযোগিতা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
এ কারণে নেটওয়ার্ক পুনরায় চালু করা যাচ্ছে না। স্রোত না কমা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত
এলাকায় নেটওয়ার্ক পুনঃসংযোগ করা সম্ভব নয়।
কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, টাওয়ার সচল রাখতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যাটারি ব্যাকআপ,
ডিজেল জেনারেটর কিংবা পোর্টেবল জেনারেটরের মাধ্যমে টাওয়ার সচল রাখতে
সংস্থাটি মোবাইল অপারেটরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু : বন্যার মধ্যে টেলিযোগাযোগ সেবা সচল রাখতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ
চালু করেছে বিটিআরসি। সংস্থাটি বলছে, এ পরিস্থিতিতে ১৫ জনের ইমার্জেন্সি রেসপন্স
দল গঠন করা হয়েছে। যারা দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে নিয়ন্ত্রণ
কক্ষে দায়িত্ব পালন করবেন। বিটিআরসির ইমার্জেন্সি রেসপন্স দলের সঙ্গে
যোগাযোগ করতে +৮৮০২২২২২১৭১৫২ নম্বরে ফোন করতে হবে। বিটিআরসির কল
সেন্টার ১০০ ব্যবহার করেও ওই দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে।
মৌলভীবাজারে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে : মৌলভীবাজার জেলা সংবাদদাতা:
বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয়
সীমান্তবর্তী নদী বেষ্টিত মৌলভীবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।
জেলার ধলাই নদী ছাড়া, কুশিয়ারা, মনূ ও জুড়ী নদীসহ সবগুলো প্রধান নদ-নদীর
পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও মৌলভীবাজারে কিছুটা পানি কমতে
শুরু করলেও ৪টি নদীর ১৫টি ভাঙ্গন দিয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
উপরিভাগে বন্যার কিছুটা উন্নতি হলেও নি¤œাঞ্চল রাজনগর উপজেলা
সদরসহ বিভিন্ন এলাকার ঘর-বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখনও কোমরসম পানিতে নিমজ্জিত।
এদিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ময়নার দোকান নামক স্থানে মাছ ধরতে এসে পানিতে
পড়ে নিখোঁজ হয়েছেন হৃদয় মিয়া (২২) নামে এক যুবক।
ভারতের উজানের ঢলের পানি ও টানা বর্ষণে মৌলভীবাজার জেলার সদর, রাজনগর,
কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও জুড়ীসহ অন্যান্য উপজেলার ৭২টি ইউনিয়নের বিভিন্ন
গ্রামের মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েন। মনু নদীর ছয়টি স্থানে ও ধলাই নদীর
চারটি স্থানে বন্যাপ্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে বেশি আক্রান্ত হয় রাজনগর, কুলাউড়া
ও কমলগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়ন। বন্যা আক্রান্ত মানুষকে স্থানীয় প্রশাসনের
সঙ্গে সেনাবাহিনী বোর্ডসহ উদ্ধার ও বিভিন্ন রকম সহযোগিতা করছে।
২২ আগস্ট মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও
ওইদিন রাত থেকে কিছু যানবাহন চলাচল শুরু করেছে।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুপ্রভাত চাকমা বলেন,
উপজেলা সদর এখনও পানিতে নিমজ্জিত থাকলেও পানি কমতে শুরু করেছে।
তবে কাউয়াদীঘি হাওরপাড়ের পাঁচগাঁও, ফতেপুর ও উত্তরবাগ ইউনিয়নের
নি¤œাঞ্চলের বেশ কিছু গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। কুলাউড়ার টিলাগাঁও
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল জানান বাড়ি-ঘর থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।
মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে পড়ে নিখোঁজ : রাজনগর উপজেলার মেদিনীমহল
গ্রামের ছনাওর মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া (২২) গতকাল দিবাগত রাতে জাল
দিয়ে মাছ ধরতে আসে সদর ইউনিয়নের ময়নার দোকান এলাকায়। রাত দেড়টার
সময় ঝাকি জাল খেউ (মাছ ধরতে
ফেলার) দেয়ার সময় তিনি পানিতে পড়ে আর ওঠতে পারেননি।
ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মেদিনীমহল
গ্রামের হৃদয় অনেকের সঙ্গে জাল নিয়ে মাছ ধরতে আসেন ময়নার দোকান এলাকায়।
মাছ ধরতে জাল উড়িয়ে ফেলার সময় তিনি পা ফঁসকে পানিতে পড়ে যান। তীব্র স্রোত
থাকায় তিনি আর ওঠতে পারেননি। এ বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে রাজনগর ফায়ার সার্ভিসকে
জানানো হয়। তারা সিলেটের ডুবুরি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা আজ শুক্রবার ২৩
আগস্ট ২০২৪ ইং, সকালে এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। আশপাশ এলাকা খুঁজে নিখোঁজ
ব্যক্তিকে না পেয়ে সিলেটে ফিরে যায় ডুবুরি দল বলে জানিয়েছেন রাজনগর ফায়ার
সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন ম্যানেজার আলী হোসেন। এর সত্যতা নিশ্চিত
করেছেন, রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুপ্রভাত চাকমা।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাবেদ ইকবাল বলেন, বাংলা
দেশ ও ভারতের ত্রিপুরায় বৃষ্টি হওয়াতে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টি কমে গেলে
পানি ও নীচে নেমে যাবে। গতকাল ২২ আগস্ট বিকেলে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা মেজর
জেনারেল চৌধুরী আজিজুল হক হাজারী ও মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে
সালাম প্রাব্লিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানা যায়, জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ২৩৫ মেট্রিক টন
চাল ও নগদ ১২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
ফটিকছড়িতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় নিহত ১ নিখোঁজ ২
ফটিকছড়ি সংবাদদাতা : ট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
এতে এক শিশু নিহত ও দুইজন নিখোঁজ রয়েছে। উদ্বেগ উৎকন্ঠা শংকার মধ্যে দিয়ে
দিন-রজনী পার করছেন এলাকাবাসী। বিশষে করে শুক্রবার দিনগত রাতটি ছিল ভয়াবহ।
উপজেলা জুড়ে বন্যা দুর্গত মানুষের বাঁচার আকুতি, হাহাকার,আতংকে নির্ঘুম ভয়াল
রজনীর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তবে স্থানীয় ও উপজেলার বাইরের সেচ্ছাসেবী ও মানবিক
সংগঠনগুলোর ঝাঁপিয়ে পরা ছিল চোখে পড়ার মতো। এখনো সে ধারা অব্যাহত রয়েছে।
উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ উপজেলা প্রশাসন,আইনশৃংঙ্কলা বাহিনীর পাশাপাশি এসব সংগঠন ও
সেচ্ছাসেবীদের ভূমিকা ছিল যথেষ্ট। যার কারণে মানুষের জান মালের অনেক ক্ষতি রোধ করা
গেছে বলে সচেতন মহল মন্তব্য প্রকাশ করেন।
গত বুধবার থেকে ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলার বাগানবাজার, দাঁতমারা ইউনিয়নসহ
ফটিকছড়ি পৌরসভা, নাজিরহাট পৌরসভা,সুন্দরপুর,পাইন্দং ,হারুয়ালছড়ি,
সুয়াবিল,নারায়ণহাট, ভূজপুর বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এছাড়া লেলাং,
সমিতিরহাট, রোসাংগিরী, জাপতনগর, বক্তপুর, নানুপুর, ধর্মপুরসহ ইউনিয়নের
বিভিন্ন স্থানে বন্যার সৃষ্টি হয়। অনেক পরিবারকে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও
সেচ্ছাসেবক কর্মীরা উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসে। এখনো পানি বন্দী
হয়ে রয়েছে শত শত পরিবার। শত শত বাড়ি ঘর এখনো পানির নিচে। খাবার, ঔষধ ও
পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে এসব এলাকায়।
এশিয়া মহাদেশের অন্যতম আধ্যাত্বিক কেন্দ্র মাইজভা-ার দরবার শরীফসহ আশে
পাশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চট্টগ্রাম-খাগগছড়ি সড়ক, গহিরা-হেয়াকো সড়ক,
নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়ক, কাটিরহাট-সমিতিরহাট-আজাদীবাজার,সমিতিরহাট-নানুপুর সড়কের
বিভিন্ন স্থানে পানিতে ডুবে আছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে এসব সড়কের বিভিন্ন স্থানে।
এছাড়া বিভিন্ন গ্রামীন সড়ক পানিতে ডুবে এবং পানির স্রোতে ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
হালদার উপর নির্মিত নারায়নহাটের কাঠের ব্রীজটি পানির স্রোতে ভেসে গেছে বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন হাটবাজারে বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বন্ধ রয়েছে ব্যবসা বাণিজ্য।
এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে নিঁখোজ হওয়ার একদিন পর সামি (১২) নামে এক শিশুর লাশ
পাওয়া গেছে। নিহত সামি দাঁতমারা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড সাদিনগরের ভাড়াটিয়া
হামিদের পুত্র বলে জানা যায়।
জানা যায়, সামি সহ তিন শিশু বন্যার পানিতে নি¤œবর্তী সড়ক দিয়ে পার হওয়ার সময়
তলিয়ে গেলে বাকি দুই শিশুকে স্থানীয়রা উদ্ধার করলেও সামি নামে শিশুটি নিখোঁজ হয়।
অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তী নিঁখোজ হওয়ার দূরবর্তী স্থানে
তার লাশ দেখতে পাই স্থানীয়রা।
ধর্মপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ সরওয়ার বলেন সর্তা নদীর বাঁধ উপচে বিভিন্ন বাড়ি ঘর
পানিতে তলিয়ে গেছে।
নাজিরহাট এলাকার মোহাম্মদ আলমগীর বলেন,আমাদের এলাকায় হালদা নদীর বাঁধ উপচে
পানি আসে। দেখতে দেখতে পানি বেড়ে গিয় শত শত ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করে।
এদিকে পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত একর চাষের জমি,পুকুর,মাছের প্রজেক্ট,
পোল্ট্রী ফার্ম। উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন,উপজেলা
চাষাবাদদের ব্যপক ক্ষতি হয়েছ। পানি সরে গেলে ক্ষতির পরিমান নিরুপণ সম্ভব হবে।
উপজেলায় দুই পৌরসভাসহ প্রায় ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজার
পরিবারের লক্ষাধিক লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ৫০
মেট্রিক টন চাল ও চার লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা
নিয়ন্ত্রন কক্ষে দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প অফিসার আবুল হোসেন।
কমলনগরে পানিবন্দী হাজার হজার পরিবার বিপর্যস্ত
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : খরস্রোতা মেঘনার জোয়ার ও ভারী বর্ষণে
লক্ষ্মীপুরে রামগতি ও কমলনগর খাল-বিল, ফসলের ক্ষেত, রাস্তা-ঘাট,
হাট-বাজারসহ বসতবাড়িও ডুবে গেছে।
অধিকাংশ বাড়িতেই হাঁটুপানি। চুলায় আগুন না জ্বলায় পরিবারের রান্না-বান্না
বন্ধ হয়ে গেছে। এতে হাজার হাজার
পরিবারের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের চরঠিকা ও ভূলুয়া নদীর
আশেপাশের গ্রামগুলোতে
পানিবন্দী মানুষের দুঃখের যেন শেষ নেই। এছাড়া মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ
না থাকায় অস্বাভাবিক জোয়ারের
পানিতে তলীয়ে যায় চর ফলকন, সাহেবেরহাট, পাটারিরহাট, চর মার্টিন, চর লরেন্স,
চর কালকিনি ইউনিয়ন।
তোরাবগঞ্জ ও হাজিরহাট ইউনিয়নের মানুষও পানিবন্দী।
সরেজমিনে কমলনগরের চরকাদিরা ইউনিয়নের ভুলুয়া নদী এলাকা ঘুরে দেখা যায়,
ভুলুয়া নদীতে উপছে পড়ছে পানি। অথচ শুষ্ক মৌসুমে এ নদীতে পানিই থাকে না।
একই সঙ্গে আশপাশের বিস্তীর্ণ
এলাকাও ডুবে আছে বৃষ্টির পানিতে। অধিকাংশ বাড়িতেই হাঁটু পানি জমে আছে।
আবার অনেক বাড়িতে কোমর
পরিমাণ পানি, ঘরেও ঢুকে পড়েছে। সেখানকার মানুষ উঁচু এলাকায়
আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
রামগতির চরপোড়াগাছা গ্রামের শেখের কিল্লা এলাকায় গিয়ে শতাধিক
বাড়িতে হাঁটু পরিমাণ
পানি দেখা যায়। তারা বাড়িতে রান্নার হাঁড়ি বসাতে পারছে না, ঘরে বাইরে
পানি আর পানি।
চরবাদাম ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ এলাকার পূর্ব পাশে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে
তলিয়ে গেছে। গণকবরস্থান ডুবে আছে।
রামগতি ও কমলনগরের বাসিন্দারা বলছেন, ভূলুয়া নদীর বিভিন্ন স্থান দখল হয়ে গেছে।
যে কারণে সহজে পানি সরতে না পারায় জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। অপরদিকে,
মেঘনা নদী অরক্ষিত,
এখানে নেই তীর রক্ষা বাঁধ যে কারণে জোয়ার এলেই গ্রামের পর গ্রাম ডুবে যায়।
রামগতি উপজেলার চরবাদাম ও চরপোড়া গাছা ইউনিয়ন ঘুরে পানিবন্দী বাসিন্দাদের
দুর্দশার চিত্র দেখা যায়। এছাড়াও বালুর চর, আলেকজান্ডার, চর গোসাই, চর আবদুল্লাহ,
রগুনাথপুরসহ মেঘনা উপকূলীয় গ্রামগুলো অতিবৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ভাসছে।
এদিকে, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পানিবন্দী
পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাসকে
কোমর পানি মাড়িয়ে বাড়ি
বাড়ি গিয়ে শুকনো খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিতে দেখা গেছে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন,
মেঘনার জোয়ারের সময় স্লুইসগেট বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, ভাটার সময় খুলে দেয়া হয়।
লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান বলেন, জেলায় শুকনো খাবার
বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া আমাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী ১৮৯টি সাইক্লোন
সেন্টার প্রস্তুত রয়েছে।
যত মামলা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে
ফেঁসে যাচ্ছে রগচটা বিচারপতি মানিক