নাগরিক কমিটি: বাংলাদেশের ভবিষ্যত!
ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত
সফল করার লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ
মিনারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ৫৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক
কমিটি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
সংগঠনের পক্ষে কমিটি ঘোষণা করেন আহ্বায়ক মুহাম্মাদ নাসীরুদ্দীন
পাটওয়ারী। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির
সদস্য। সংগঠনের সদস্য সচিব হিসেবে গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির কেন্দ্রীয়
আহ্বায়ক আখতার হোসেন ও মুখপাত্র হিসেবে রয়েছেন সামান্তা শারমিন।
লিখিত বক্তব্যে মুখপাত্র সামান্তা বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি
আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে কাজ শুরু করছে। অচিরেই সকল
মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী
সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে
আমরা আলোচনা করবো। তৃণমূল পর্যন্ত এ কমিটির বিস্তৃতি ঘটানোর
মাধ্যমে আমরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে
বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাব।
অনুষ্ঠানে আহ্বায়ক কমিটির কিছু প্রাথমিক কাজ ঘোষণা করা হয়েছে।
তা হলো- ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক
অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা; ছাত্র-জনতার
ওপর সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায়
এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ;
রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে
সহযোগিতা ও জবাবদিহিতার পরিসর তৈরি; বিভিন্ন সামাজিক,
সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের সাথে আলোচনা, মত বিনিময়
ও গণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনতাকে সংহত করার লক্ষ্যে কাজ করা;
দেশের সর্বস্তরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে সংহত করে
গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত করে রাখার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো
ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা; জনস্বার্থের পক্ষে নীতি
নির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের
সাথে বিষয়ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা; রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ
পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণী প্রস্তাবনা তৈরি ও সেটা
বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ ও গণপরিষদ গঠন
করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য
গণ-আলোচনার আয়োজন করা।
জাতীয় নাগরিক কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- আরিফুল ইসলাম
আদীব, সাইফ মোস্তাফিজ, মনিরা শারমিন, নাহিদা সারোয়ার চৌধুরি,
সারোয়ার তুষার, মুতাসিম বিল্লাহ, আশরাফ উদ্দিন মাহদি, আলাউদ্দিন
মোহাম্মদ, অনিক রায়, জাবেদ রাসিন, মো. নিজাম উদ্দিন, সাবহানাজ
রশীদ দিয়া, প্রাঞ্জল কস্তা, মঈনুল ইসলাম তুহিন, আব্দুল্লাহ আল আমিন,
হুযাইফা ইবনে ওমর, শ্রবণা শফিক দীপ্তি, সায়ক চাকমা, সানজিদা
রহমান তুলি, আবু রায়হান খান, মাহমুদা আলম মিতু, অলিক
মৃ, সাগুফতা বুশরা মিশমা, সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজ, তাসনিম জারা,
মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া, মো. আজহার উদ্দিন অনিক, মো. মেসবাহ কামাল,
আতাউল্লাহ, এস. এম. শাহরিয়ার, মানজুর-আল- মতিন, প্রীতম দাশ,
তাজনূভা জাবীন, অর্পিতা শ্যামা দেব, মাজহারুল ইসলাম ফকির, সালেহ
উদ্দিন সিফাত, মুশফিক উস সালেহীন, তাহসীন রিয়াজ, হাসান আলী খান,
মো. আব্দুল আহাদ, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, মশিউর রহমান, আতিক
মুজাহিদ, আবদুল্ল্যাহ আল মামুন ফয়সাল, মো. ফারহাদ আলম ভূঁইয়া,
তানজিল মাহমুদ, এস.এম. সুজা, মো. আরিফুর রাহমান, কানেতা ইয়া
লাম লাম, সৈয়দা আক্তার, স্বর্ণা আক্তার, সালমান মুহাম্মাদ মুক্তাদির,
আকরাম হুসেইন।
কমিটি ঘোষণা শেষে নাসীরুদ্দিন বলেন, এটি একটি বর্ধমান কমিটি।
আমরা অতিদ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করব। এই কমিটিকে আমরা
গ্রাম পর্যন্ত নিয়ে যাব। আমরা তরুণ প্রজন্ম এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে
একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি রয়েছে, তা রাষ্ট্র বিনির্মাণে বিনিয়োগ করব।
গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটকে সংহত করতে এবং চলমান দেশি-বিদেশি
চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জারি রাখতে এই কমিটি কাজ করবে।
একইসাথে বাংলাদেশের পুনর্গঠনে কিছু সংস্কার ও বিনির্মাণের কাজ
করবে এই কমিটি।
রাজনৈতিক দল গঠন করা হবে কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,
আমরা কোনো ব্যক্তি বা দলীয় এজেন্ডাকে সামনে রাখছি না।
আমরা পুরো বাংলাদেশকে সামনে রাখছি। তরুণদের একটা প্লাটফর্ম গঠন করব।
যেখানে বাংলাদেশের প্রশ্নে সবাই এক থাকবে। একটা হলো রাষ্ট্র এবং
রাজনৈতিক দল হলো তার একটি অংশ মাত্র। আমরা রাষ্ট্র পুনর্গঠন করব।
রাষ্ট্রের অধীনে অনেক প্রতিষ্ঠান থাকে। প্রত্যেকটা খাতে তরুণদের ঐক্যবদ্ধ করব।
সেখানে যদি কোনো দলের পুনর্গঠনের প্রয়োজন হয়, তা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি ১৯৭১ সালের পর নতুন রাজনৈতিক
বন্দোবস্ত হয়েছে, ১৯৯০ সালে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হয়েছে, কিন্
তু সেগুলো ব্যর্থ হয়েছে। তাই ২০২৪ সালে এসে আমাদেরকে নতুন রাজনৈতিক
বন্দোবস্ত করতে হবে।
সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, সারা দেশ থেকে আগ্রহীরা আমাদের সাথে
যোগাযোগ করছেন। আমরা ইতোমধ্যে একটি গুগল ফর্ম ছেড়েছি। সামনের
দিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে আমরা সরাসরি কথা বলে কমিটি গঠন করব।