বাংলাদেশের সদ্য ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী শেখ হাসিনা তার মিত্র দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী হাসিনার যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের প্রচেষ্টা
ব্যর্থ হয়েছে। সম্ভবত তিনি অদূর ভবিষ্যতে ভারতেই থাকতে বাধ্য হবেন। কেননা শেখ হাসিনার
ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, তার মায়ের আপাতত ভারত ত্যাগের কোনো ইচ্ছা নেই।
এটা মনে হচ্ছে যে, হাসিনা তার দীর্ঘ স্বৈরতান্ত্রিক শাসন টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিবিল্পবের কৌশল নিচ্ছেন।
২৭ আগস্ট এশিয়া টাইমস ‘হাসিনা’স লাস্ট স্টান্ড লিনস অন ইন্ডিয়া অ্যান্ড প্রো-হিন্দু মিসইনফরমেশন’
শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত হাসিনার দৃষ্টিভঙ্গি
ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এবং তার হিন্দুত্ববাদী সমর্থকদের সাথে জড়িত বলেই মনে হচ্ছে।
তিনি যদি পুনরায় ক্ষমতা দখল করতে পারেন তাহলে বাংলাদেশে ভারতের জন্য সম্ভাব্য বৃহত্তর
রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার সহজ হয়ে দাঁড়াবে। হাসিনা এবং ভারতের সম্পর্ক বাংলাদেশের জন্য কী
ঝুঁকি তৈরি করতে পারে তা উপলব্ধি করা অপরিহার্য। দিল্লি সরকার ধারাবাহিকভাবে হাসিনা এবং তার
আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে।
ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে রাশিয়া ও বেলরুশের মতো একটি পৃষ্ঠপোষকতাপূর্ণ সম্পর্কে
রূপান্তর করেছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে নিজের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে হাসিনা
নিজের অধীনে নির্বাচন দেয় এবং ক্ষমতায় আসে।
২০১৮ সালের নির্বাচনেও হাসিনার আওয়ামী লীগ নিজেদের নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি ভোটে
জয় লাভ করে। হাসিনার এমন আচরণে তখন উত্তর কোরিয়ার কথা স্মরণ হয়। প্রায় ৯৫ শতাংশ আসনে
নিজেদের ক্ষমতা পোক্ত করেছিলেন হাসিনা। সরকারি আমলা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ক্ষমতাসীন
দলের পক্ষালম্বন করায় আওয়ামী লীগের ওই বিজয় বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নজিরবীহিন প্রতারণামূলক
নির্বাচন ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে পশ্চিমারা হাসিনাকে সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য ব্যাপক চাপ
প্রয়োগ করে। কিন্তু দিল্লি বরাবরের মতোই হাসিনার পক্ষেই কাজ করতে থাকে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনে
সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া প্রশমিত করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে ভারত। এর মাধ্যমে দিল্লি সরাসরি আরেকটি ত্রুটিপূর্ণ
নির্বাচনকে এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে।
২০২২ সালে আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের সম্পর্কের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এ কে মোমেন। তিনি সেসময় বলেছিলেন, তিনি আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনতে ভারতকে অনুরোধ করেছিলেন।
সম্প্রতি হাসিনার ছেলে জয় বলেছেন, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী
সরকারকে চাপ দেবে ভারত। কেননা হাসিনার আকস্মিকভাবে ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়ায় ভারতীয়
আধিপত্যবাদী রাজনীতি বড় একটি ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে হচ্ছে।