জাতিসংঘে ড. ইউনূস: সারাবিশ্ব বাংলাদেশর পাশে!
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বাংলাদেশে বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোর আমূল সংস্কারে সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। টেকসই সংস্কারের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র, সুশাসন ও সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে। গণতন্ত্রের নতুন যাত্রায় বিশ্বকে পাশে চায় বাংলাদেশ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সবচে দামী শেয়ার ইসলামী ব্যাংকের!
বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। তিনি পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব গ্রহণ, বাংলাদেশ নিয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষা, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রারম্ভিক পদক্ষেপ তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। তিনি রাষ্ট্র হিসেবে দ্বিপক্ষীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের দায়িত্বের বিষয়টিও উল্লেখ করেন। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমকালীন নানা বিষয় তুলে ধরে ভবিষ্যতের পৃথিবীর কথাও ভাষণে উল্লেখ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ক্ষত-বিক্ষত পাহাড়!
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের বিষয় উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই আজ আমি বিশ্ব সম্প্রদায়ের এ মহান সংসদে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমাদের গণমানুষের, বিশেষ করে তরুণ সমাজের অফুরান শক্তি আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল রূপান্তরের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।’
ড. ইউনূস বলেন, ছাত্র ও যুবসমাজের আন্দোলন প্রথম দিকে মূলত ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। পর্যায়ক্রমে তা গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। এরপর সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখেছে কীভাবে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ একনায়কতন্ত্র, নিপীড়ন, বৈষম্য, অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজপথ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল।
ছাত্র-জনতার অদম্য সংকল্প ও প্রত্যয়ের মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্তি এসেছে বলে উল্লেখ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এই সম্মিলিত সংকল্পের মধ্যেই দেশের ভবিষ্যৎ নিহিত, যা বাংলাদেশকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মাঝে একটি দায়িত্বশীল জাতির মর্যাদায় উন্নীত করবে।
ড. ইউনূস বলেন, এই গণ-আন্দোলন রাজনৈতিক অধিকার ও উন্নয়নের সুবিধাবঞ্চিত বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। জনগণ একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, যার জন্য নতুন প্রজন্ম জীবন উৎসর্গ করেছিল। তিনি বলেন, ‘বন্দুকের গুলি উপেক্ষা করে বুক পেতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল আমাদের তরুণেরা। অবৈধ রাষ্ট্রক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রবলভাবে সোচ্চার হয়েছিল আমাদের তরুণীরা। স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীরা নিঃশঙ্কচিত্তে উৎসর্গ করেছিল তাদের জীবন। শত শত মানুষ চিরতরে হারিয়েছে তাদের দৃষ্টিশক্তি। আমাদের মায়েরা, দিনমজুরেরা ও শহরের অগণিত মানুষ তাদের সন্তানদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমেছিল রাজপথে। জনগণের এই আন্দোলনে আমাদের জানামতে আট শর বেশি জীবন আমরা হারিয়েছি স্বৈরাচারী শক্তির হাতে।’
১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন! ডক্টর ইউনুস চুপ কেন?
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘উদারনীতি, বহুত্ববাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর মানুষের গভীর বিশ্বাস থেকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়। ১৯৭১ সালে যে মূল্যবোধকে বুকে ধারণ করে আমাদের গণমানুষ যুদ্ধ করেছিল, সেই মূল্যবোধকে বহু বছর পর আমাদের “জেনারেশন জি” (প্রজন্ম জি) নতুনভাবে দেখতে শিখিয়েছে। এ রকমটি আমরা দেখেছিলাম ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার সময়েও। বাংলাদেশের এই অভ্যুত্থান আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষকে মুক্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে প্রেরণা জুগিয়ে যাবে।’
সাম্প্রতিক বিপ্লবকালে ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিনতম সময়ে জনগণের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা পূরণে তাদের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সাহসী সশস্ত্র বাহিনী আরও একবার শান্তির প্রতি তাদের অঙ্গীকার প্রমাণ করেছে বলে উল্লেখ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘এটা সম্ভব হয়েছে শান্তি রক্ষায় আমাদের অঙ্গীকারের কেন্দ্রবিন্দুতে মানবাধিকারকে স্থান দেওয়ার ফলে।’
ড. ইউনূস বলেন, জাতিসংঘে শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে অবদানকারী চতুর্থ বৃহত্তম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৪৩টি দেশে ৬৩টি মিশনে শান্তিরক্ষী পাঠিয়েছে। এসব মিশনে দায়িত্ব পালনকালে ১৬৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। যেকোনো অবস্থায় নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ শান্তি রক্ষা কার্যক্রমগুলোতে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা একইভাবে অবদান রাখার সুযোগ পাবেন বলে ড. ইউনূস আশা প্রকাশ করেন।
জামায়াতের নেতৃত্বে হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় জোট!
ন্যায়, নীতি ও নৈতিকতা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল
ড. ইউনূস বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্তর্বর্তী সরকার দেখতে পায় কীভাবে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, কীভাবে রাষ্ট্রের মূল প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মম দলীয়করণের আবর্তে বন্দী করে রাখা হয়েছিল, কীভাবে জনগণের অর্থসম্পদকে নিদারুণভাবে লুটপাট করা হয়েছিল, কীভাবে একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সব ব্যবসা-বাণিজ্যকে অন্যায়ভাবে নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে দেশের সম্পদ অবাধে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। এককথায়, কীভাবে প্রত্যেকটি পর্যায়ে ন্যায়, নীতি ও নৈতিকতা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অতীতের ভুলগুলোকে সংশোধন করে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য।’
জামায়াতের নেতৃত্বে হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় জোট!
সুশাসন ফিরিয়ে আনাই লক্ষ্য
ড. ইউনূস বাংলাদেশের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে নতুন বাংলাদেশের সঙ্গে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা মানুষের মৌলিক অধিকারকে সমুন্নত ও সুরক্ষিত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ মুক্তভাবে কথা বলবে, ভয়ভীতি ছাড়া সমাবেশ করবে, তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে—এটাই আমাদের লক্ষ্য। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ এবং সাইবার ডোমেইনসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুসংহতকরণেও আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। রাষ্ট্রব্যবস্থার সকল পর্যায়ে সুশাসন ফিরিয়ে আনাই আমাদের অভীষ্ট।’
হিজাব পরবেন সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরা!
সরকারের পদক্ষেপ
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সাত সপ্তাহের মধ্যে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কথা ভাষণে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনুরোধে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার গণ-আন্দোলনকালে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বিস্তৃত অনুসন্ধান এবং এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পরামর্শ দিতে একটি তথ্যানুসন্ধান দল বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ জন্য ড. ইউনূস তাঁকে অশেষ ধন্যবাদ জানান।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, ‘আমরা গুম প্রতিরোধে যে আন্তর্জাতিক সনদ রয়েছে, তাতে যোগদান করেছি। বাংলাদেশে বিগত দেড় দশকে যেসব গুমের অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো তদন্ত করার জন্য একটি তদন্ত কমিশন এ মুহূর্তে কাজ করছে।’
মানুষের আস্থা ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে এবং নির্মম অতীত যেন আর ফিরে না আসে, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কিছু সুনির্দিষ্ট খাতে সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে ড. ইউনূস উল্লেখ করেন। তিনি জানান, সেই লক্ষ্যে বিদ্যমান নির্বাচনব্যবস্থা, সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলাব্যবস্থা সংস্কারে স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের সংস্কারের জন্যও পৃথক কমিশনসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোনো বিদেশি ব্যবসা বা বিনিয়োগ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতেও বাংলাদেশ বদ্ধপরিকর।
গণতান্ত্রিক উত্তরণে সরকারের ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এসব সংস্কার যেন টেকসই হয়, তা দীর্ঘ মেয়াদে নিশ্চিত করতে এবং অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সমতা ও সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ হিসেবে আত্মপ্রকাশের অভিপ্রায় বাস্তবায়নে ড. ইউনূস বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সহযোগিতা ব্যাপকতর ও গভীরতর করার আহ্বান জানান।
ভাষণে ড. ইউনূস অবৈধ অর্থের প্রবাহ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে সম্পদের পাচার বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। এ জন্য তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে পাচার হয়ে যাওয়া সম্পদ ফেরত আনার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের কথা বলেন।
হিজাব পরবেন সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরা!
তিন শূন্য ধারণা
বৈশ্বিক পরিসরে জলবায়ু সংকট মোকাবিলা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি সুসংহতকরণে যুগপৎভাবে কাজ করার তাগিদ দেন ড. ইউনূস। তিনি উল্লেখ করেন বিশ্ব সম্প্রদায় এখন কার্বনমুক্ত পৃথিবী গড়ে তুলতে মনোযোগী হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে তিনি ‘তিন শূন্য’র লক্ষ্য অর্জনের প্রস্তাব দেন। ড. ইউনূস বলেন, ‘এর মাধ্যমে আমরা শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ অর্জন করতে পারি। যেখানে পৃথিবীর প্রত্যেক তরুণ-তরুণী চাকরিপ্রার্থী না হয়ে বরং উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পাবে। তারা যেন সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নিজ নিজ সৃজনশীলতার বিকাশ করতে পারে, যেখানে একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ সামাজিক সুফল, অর্থনৈতিক মুনাফা এবং প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীলতার মধ্যে একটি চমৎকার ভারসাম্য আনতে মনোযোগী হতে পারে, যেখানে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তি ভোগবাদী জীবনধারা থেকে উত্তরণ করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সৃজনশীল শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই সময়ে তাই প্রয়োজন উন্নত ও উন্নয়নশীল সকল দেশ ও বিভিন্ন অংশীদারদের মধ্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন মূল্যবোধ এবং নতুন একতা। সামগ্রিকভাবে এই লক্ষ্য অর্জনে জাতিসংঘ ব্যবস্থা, জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সরকারসমূহ, সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি অংশীজন (এনজিওসমূহ) এবং দাতব্য সংস্থাগুলোকে কাজ করতে হবে একসঙ্গে। তিনি বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে অভিযোজনের জন্য ব্যাপক বিনিয়োগেরও আহ্বান জানান।
সরকারি চাকুরীদের ৩০ শে নভেম্বরের আল্টিমেটাম!
রোহিঙ্গা সংকট
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলের জন্য প্রথাগত ও অপ্রথাগত উভয় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালু রাখা এবং তাদের টেকসই প্রত্যাবাসন করার উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যাপ্ত সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সংঘটিত হওয়া ব্যাপকভিত্তিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চলমান বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’
সন্ত্রাসীদের ডেরায় যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা!
ফিলিস্তিনে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে গুরুত্ব পেয়েছে মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, বিশ্ববাসীর উদ্বেগ এবং নিন্দা সত্ত্বেও গাজায় গণহত্যা থামছে না। ফিলিস্তিনের বিদ্যমান বাস্তবতা কেবল আরব কিংবা মুসলমানদের জন্যই উদ্বেগজনক নয়, বরং তা সমগ্র মানবজাতির জন্যই উদ্বেগের। একজন মানুষ হিসেবে প্রত্যেক ফিলিস্তিনির জীবন অমূল্য। ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ হচ্ছে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়বদ্ধ করতে হবে।
ড. ইউনূস বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর চলমান নৃশংসতা, বিশেষত নারী ও শিশুদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যে নিষ্ঠুরতা বিশ্ব দেখছে, তা থেকে নিস্তারের জন্য বাংলাদেশ অনতিবিলম্বে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে। দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি আনতে পারবে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সবাইকে এর বাস্তবায়নের জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।
আড়াই বছর ধরে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘এই যুদ্ধের প্রভাব সর্বব্যাপী। এমনকি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। আমরা তাই উভয় পক্ষকেই সংলাপে বসে বিরোধ নিরসনের মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’
ড. ইউনূস জানান, বাংলাদেশ যেসব আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তির পক্ষভুক্ত, সেগুলো প্রতিপালনে সরকার বদ্ধপরিকর। জাতিসংঘসহ বহুপক্ষীয় বিশ্বকাঠামোতে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অবদান অব্যাহত থাকবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, মর্যাদা ও স্বার্থ সংরক্ষণের ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।
নিহতের পরিবার ৫ লাখ, আহতরা ১ লাখ
জাতিসংঘে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী
ড. ইউনূস বলেন, ‘এ বছর আমরা জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারত্বের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছি। গত ৫০ বছর ছিল আমাদের জন্য একটি পারস্পরিক শিক্ষণীয়, সম্মিলিত যাত্রা। সীমিত উপায়ে বাংলাদেশ বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা, ন্যায়, সমতা, মানবাধিকার, সামাজিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে ধারাবাহিকভাবে অবদান রেখে আসছে। আমাদের সমন্বিত প্রয়াস সত্যিকার অর্থে একটি নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা।’
সবচে দামী শেয়ার ইসলামী ব্যাংকের!
জামায়াতের নেতৃত্বে হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় জোট!