আবার উত্তাল টি এস সি- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়!
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নতুন গণতান্ত্রিক পরিবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে কাউকে
পিটিয়ে হত্যার ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তোফাজ্জল হোসেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত
ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও এই হত্যার দায়
নিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেছেন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা।
আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যের সামনে এক
মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এ দাবি করেন। ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ফজলুল হক হলের কতিপয় শিক্ষার্থী তোফাজ্জল হোসেন নামের এক যুবককে চোর সন্দেহে ধরে নিয়ে
গিয়ে হলের অতিথিকক্ষে পিটিয়ে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এই মানববন্ধন ও সমাবেশের
আয়োজন করা হয়। আয়োজন করেছিল নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের পক্ষে ঢাকাস্থ পাথরঘাটার
শিক্ষার্থীরা।
আজ সকাল ১০টায় টিএসসির রাজু স্মারক ভাস্কর্যের সামনে এ সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হলেও
সেখানে আগে থেকেই অন্য একটি সংগঠনের সমাবেশ শুরু হওয়ায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলাভবনে
এ সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
আয়োজকেরা প্রথম আলোকে জানান, তোফাজ্জল হোসেন বেশ কিছুদিন থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন
অবস্থায় ছিলেন। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। তাঁর বাড়ি বরগুনা জেলার
পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলা গ্রামে। তাঁর নিজের বলতে কেউ নেই, ২০১৫ সালে বাবা, ২০১৯ সালে মা
এবং একমাত্র বড় ভাই গত বছর মারা গেছেন। ভাইয়ের মৃত্যুর পর থেকেই তোফাজ্জল হোসেন মানসিক ভারসাম্য
হারিয়ে ফেলেন। তিনি ভবঘুরে জীবন যাপন করছিলেন। মাঝেমধ্যে ফজলুল হক হলের ক্যানটিনে খেতে আসতেন।
সেদিন রাতেও তিনি খেতে এসেছিলেন। মুঠোফোন চোর সন্দেহে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে বক্তব্য
দেন প্রাক্তন শিক্ষার্থী আইনজীবী ওবায়দুল তালুকদার। তিনি বলেন, চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ধরে একজন মানুষকে
হলের অতিথিকক্ষে পিটিয়ে হত্যা করা হলো অথচ হলের প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টর, উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ
কিছু জানলেন না, এটা মেনে নেওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এর দায় নিতে হবে। ব্যর্থতার জন্য
তাদের ক্ষমা চাইতে হবে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসমা আক্তার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলাল হোসেন, প্রাইম
বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসিবুর রহমান, ইডেন মহিলা কলেজের মরিয়া তালুকদারসহ অনেকে। তাঁরা বলেন, ‘বুয়েটের
শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল, ঠিক একইভাবে তোফাজ্জল হোসেনকেও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি ক্ষুধার্ত ছিলেন। তাঁকে খাবার খাওয়ানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসেছে। সেখান থেকেই দেখা যাচ্ছে,
কারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড যাকে বলা হচ্ছে “মব জাস্টিস”, তার পুনরাবৃত্তি
দেখতে চাই না। সরকারকে গণপিটুনি দিয়ে মানুষ হত্যা বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
বক্তারা বলেন, তোফাজ্জল হোসেনের কেউ নেই, এটা ভেবে যদি কেউ মনে করেন এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ হবে না,
তবে তা ভুল হবে। বরগুনা পাথরঘাটার শিক্ষার্থীরাসহ দেশের বিবেকবান মানুষ তোফাজ্জল হোসেনের আত্মার আত্মীয়
হয়ে তাঁর হত্যার বিচার চেয়ে রাজপথে নেমে আসবেন।
সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, তোফাজ্জলকে হত্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শাহবাগ থানায় অজ্ঞাতনামা
ব্যক্তিদের নামে হত্যার অভিযোগ করেছে। এটা সম্পূর্ণ দায় এড়ানোর চেষ্টা। হলের শিক্ষার্থীরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন,
তা পরিষ্কার। কারা এর সঙ্গে জড়িত, তা অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে খুঁজে বের করে তাঁদের নামে মামলা করতে হবে।
একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন এই নৃশংস ঘটনার বিষয়টি জানতে পারল না, সে বিষয়ে তাদের জবাবদিহি করতে
হবে। এর দায় নিতে হবে। স্বৈরশাসনের অবসানের পর এমন ঘটনা চলতে পারে না, মেনে নেওয়া যায় না। অতিদ্রুত এ
ধরনের হত্যাকণ্ড বন্ধ করতে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।