চাকরি ছাড়তে চান? এখনই চাকরী ছাড়ুন!
অফিসের বেতন-কাঠামো সন্তোষজনক নয়, অথবা নিজেকে মানিয়ে নিতেই পারছেন না বর্তমান কাজের পরিবেশে—ভাবছেন চাকরিটা এবার ছেড়েই দেবেন। জাঁদরেল কাজপাগল বড় কর্তার মুখে পদত্যাগপত্রটা ছুঁড়ে মারছেন- সে সুখ চিন্তায় বিভোরও হচ্ছেন?
চাকরি আপনার পোষায় কিনা- তা নিতান্তই আপনার ব্যক্তিগত বিষয়, আর দিনশেষের সিদ্ধান্তটিও আপনার। কিন্তু, একইসঙ্গে জরুরি সঠিক উপায় মেনে কর্মস্থল ত্যাগ। কারণ, তাতে আপনার ক্যারিয়ারের উন্নতি বৈ ক্ষতি হবে না- রক্ষা হবে কর্মী হিসেবে আপনার সুনাম, নিশ্চিত হবে ভবিষ্যতে আরও ভালো চাকরি ও বেতনের সুযোগ।
কয়েকটি নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করে, আপনি বর্তমান কর্মস্থল সঠিক উপায়ে ত্যাগ করতে পারেন; যার গুরুত্ব তুলে ধরে চাকরির সন্ধানদাতা ওয়েবসাইট ‘ইনডিড’- এর ভাইস প্রেসিডেন্ট স্কট বনেউ বলছেন, “রাগারাগি করে চাকরি ছাড়ার পরিণাম ভালো হয় না। তার জের পড়ে পুরো ক্যারিয়ারে। হয়তো আপনি যে শিল্পে আছেন, সেখানকার অন্যান্য কোম্পানি আপনাকে বর্জন করবে। ক্ষুণ্ণ হবে আপনার পেশাগত সুনাম।”
তার মতে, “অনেক শিল্পের পরিধিটা বেশ ছোট। সবাই সবাইকে চেনে, নতুন কর্মী নিয়োগের পূর্বে তারা আগের প্রতিষ্ঠানে খোঁজখবর নেয়। এ বাস্তবতায়- আপনি যদি বর্তমান চাকরি বাজেভাবে ছাড়েন বা সদ্য চাকরিতে ঢুকেই ছেড়ে দিতে উদ্যত হন- নির্ঘাত তা আপনার পরের চাকরির আবেদনে কালো ছায়া ফেলবে।”
তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জেনে নিন, পেশাদারিভাবে চাকরি ছাড়ার ধাপগুলো। এই গাইড আপনাকে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়াও শেখাবে।
৭ই মার্চ, ১৫ই অগাস্টসহ বাতিল হচ্ছে জাতীয় আট দিবস!
প্রথমেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার (বস) সাথে মিটিং সেট করুন:
চাকরিটা এবার ছেড়েই দিচ্ছেন—কথাটি কাছের কয়েকজন সহকর্মী বন্ধুকে বলার তর হয়তো সইছে না আপনার!
তার ওপর যদি হয়- নতুন চাকরিতে যোগদানের উৎসাহে—তাহলে অনেকের জন্যই উত্তেজনা চেপে রাখা দায়।
‘উতলা হবেন না, স্রেফ চেপে যান’ এমন পরামর্শ দিয়েছেন আরেক চাকরির বিজ্ঞাপন দাতা সাইট ‘মনস্টার’-
এর ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞ ভিকি সালেমি।
তার পরামর্শ, “এক্ষেত্রে ধৈর্য ধরাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। বসকে জানানোটাই আপনার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তারা ফাঁকা আছেন, এমন সময়ে বৈঠকের দিনক্ষণ ঠিক করুন। খোলাখুলি আলাপ করুন। তারপর শেষ
সিদ্ধান্ত ইমেইল বা লিখিত আকারে পাঠান।”
কী বলবেন সে প্রস্তুতি নিন:
বসের সাথে বৈঠকের আগে কি বলবেন, ঠিক করেছেন? না করলে তা আগে ভাবনা-চিন্তা করে সাজিয়ে নিন।
সালেমি বলেন, “চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত যখন নিয়েই ফেলেছেন সেটাই যথেষ্ট ব্যাখ্যা, এর বাইরে বাড়তি কোনো
ব্যাখ্যা আপনার বসের প্রাপ্য নয়, আপনি তা দিতে আর বাধ্যও নন। চাইলে তার কাছে নতুন কর্মদাতার পরিচয়
সম্পর্কেও গোপনীয়তা বজায় রাখতে পারেন।” অর্থাৎ নতুন কোথায় জয়েন করছেন, তা বলারই দরকার নেই।
“শুরুটা করতে পারেন একসাথে কাজের সুযোগ দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। যেমন বলতে পারেন, গত দুই
বছরে আপনার থেকে অনেককিছুই তো শিখলাম, এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি অন্য কোথাও তার সদ্ব্যবহার করব।
এরপর এক কথায়, জানিয়ে দিতে পারেন পদত্যাগের সিদ্ধান্ত এবং শেষ কবে অফিস করবেন- ইত্যাদি।
এরপর বসকে
বলুন- আপনি অনুমতি দিলে এবার আমি সহকর্মী আর বন্ধুদেরও বিষয়টি জানাতে চাই।”
সালেমি বলেন, এটা যেহেতু একটি আলাপচারিতা তাই আপনার বস স্বাভাবিকভাবেই আপনি কেন চাকরি ছাড়তে চান,
কোথায় যাচ্ছেন- এমন প্রশ্ন করবেন। তিনি উল্টো আপনাকে বেশি বেতন ও অন্য সুবিধার প্রস্তাবও দিতে পারেন। আর
সেজন্য আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ বেশিরভাগ মানুষ এই আলাপের আগেই- কী বলবে না বলবে
তা নিয়ে অহেতুক ভাবনায় হয়রান হয়।
যথাযথ সময় মেনে নোটিশ দিন:
স্কট বনেউ বলছেন, চাকরি বদলের এ প্রক্রিয়া নির্বিবাদ রাখতে পেশাদারি উপায় হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মেনে নোটিশ
দেওয়া। প্রতিষ্ঠান ও চাকরির শর্তভেদে দুই সপ্তাহ থেকে এক মাস আগেই তা দেওয়া যেতে পারে।
হিউম্যান রিসোর্স সফটওয়্যার প্রোভাইডার ব্যাম্বুএইচআর- এর প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা ক্যাসি হুইটলকের মতে,
“এমন যদি হয়- আপনার নতুন নিয়োগদাতা আপনাকে কালকেই কাজে যোগ দিতে বলছেন, তাহলে বুঝবেন প্রতিষ্ঠানটি
নিয়মনিষ্ঠ নয়। আগেভাগে তাদের সম্পর্কে সতর্ক হোন। কারণ রীতিবিরুদ্ধ এমন হঠকারি সিদ্ধান্ত তারা আপনার ব্যাপারেও
নিতে দ্বিধা করবে না।”
তিনি আরও বলেন, “নতুন নিয়োগদাতা আপনার চাকরি পরিবর্তনের পুরো প্রক্রিয়াটিতে কীভাবে আপনাকে সহায়তা দেবে-
তার ওপর নির্ভর করছে দুঃসময়ে তারা আসলেই কতখানি আপনার পাশে থাকবে।”
প্রয়োজনে এইচআর-এর সাথে যোগাযোগ করুন:
মানবসম্পদ কর্মকর্তা (এইচআর) একটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। কোনো প্রতিষ্ঠানে যোগদানের আগেই তাদের
উচিৎ আপনাকে নিয়োগপত্র পাঠানো। সেটি হাতে না আসার আগেই বর্তমান কর্মস্থলে কিছু জানাতে যাবেন না বলে
পরামর্শ দেন সালেমি।
“আবার নতুন কোম্পানির নিয়োগপত্র পেলে অবশ্যই পুরোনো প্রতিষ্ঠানের এইচআরকে জানান। প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ
নথি বা সরঞ্জাম আপনার জিম্মায় থাকলে, তা কখন কীভাবে জমা দিতে হবে- এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো রাখুন তাদের
কাছে। কারণ আপনার চূড়ান্ত লক্ষ্য- একটি নির্বিবাদ, মসৃণ চাকরি বদল।”
অবশ্যই পদত্যাগপত্র জমা দিন:
মৌখিক ভাবে সিদ্ধান্ত জানালেও লিখিত পদত্যাগপত্র অবশ্যই জমা দিতে ভুলবেন না। সেখানে আপনার চাকরি
ছাড়ার কিছুটা বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিন।
বনেউ বলছেন, “পদত্যাগপত্রে এইচআর’কে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, কর্মপরিবেশ আরও উন্নত করার
পরামর্শ দিতে পারেন। এতে আপনার পুরোনো সহকর্মীদের কর্মপরিবেশ সহজতর হতে পারে।”
মন দিয়ে কাজ করতে থাকুন:
পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে। এ সময়টা হেলাফেলা করে কাজ করবেন না। আগের মতো নিয়ম
মেনে মন দিয়ে কাজ করুন। খেয়াল রাখবেন, এই সময় যেন আপনি আপনার সেরা কাজটি উপহার দিয়ে যান। তাতে
আপনার চলে যাওয়া নিয়ে সবাই মনে মনে আক্ষেপ করবে।
ছাত্রলীগকে ৭ দিনের মধ্যে নিষিদ্ধের আলটিমেটাম!
যোগাযোগের উপায় নষ্ট করবেন না, সম্পর্ক রক্ষার সুযোগ রাখুন:
হুইটলক বলেন, “পেশাদারি নেটওয়ার্ক আমাদের কর্মক্ষেত্রের চমৎকার সব সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাই সেখানে
স্থায়ী কোনো নেতিবাচক ঘটনার ছায়া রাখবেন না। বরং, সুনাম নিয়ে বেড়িয়ে যান। একথা বলা সহজ, করা কঠিন।
কিন্তু চেষ্টা আপনাকে করতেই হবে। অফিসে যার সাথে মনোমালিন্য ছিল, যাবার আগে অবশ্যই তার সাথে বিরোধের
শান্তিপূর্ণ সমাধান করুন। যাতে তিনিও আপনাকে মনে রাখেন। নিজের ব্র্যান্ডিং সম্পর্কে সচেতন থাকবেন। একটি
স্পষ্ট ব্র্যান্ডিং লক্ষ্য রেখে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যান।”
ছাত্রলীগকে ৭ দিনের মধ্যে নিষিদ্ধের আলটিমেটাম!
বিএনপির চাই ভোট, জামায়াতের সংস্কার!
এবার ফেইসবুক তৈরি করবে আপনার ভিডিও!