আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে এবার জাতীয় পার্টিতে (জাপায়) নতুন মোড় নিয়েছে। নানা দেন দরবারের পরও দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি। ফলে নির্বাচন প্রশ্নে জাপা নতুন কোনো শিরোনাম হতে পারে যেকোনো সময়।
এর আগে সমঝোতায় পৌঁছানোর আশায় জাপার মনোনয়ন ফরম বিক্রির সময় একদিন বাড়িয়ে গতকাল শুক্রবার করা হয়েছিল। কিন্ত শেষ দিনেও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি রওশন এরশাদ এবং তার ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদও (সাদ এরশাদ)। শুক্রবার শেষ দিন শেষে জাতীয় পার্টি সর্বমোট ১ হাজার ৭৫২টি ফরম বিক্রি করেছে। এ থেকে দলটির আয় হয়েছে ৫ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। একইদিন বেলা ১১টা থেকে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু হয়। মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি এবং দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব, কো চেয়ারম্যন ও প্রেসিডিয়াম মেম্বাররা। আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের এবং পরদিন ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে।
জাতীয় পার্টির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, জি এম কাদের রওশন এরশাদ এবং তার ছেলে সাদ এরশাদের বিষয়ে যেকোনো ছাড় দিতে রাজী, এ ক্ষেত্রে তারা যেকোনো দিন মনোনয়ন সংগ্রহ করতে পারবেন। কিন্ত রওশনপন্থী হিসেবে পরিচিত এবং বিভিন্ন অভিযোগে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত দলটির সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান (রাঙ্গা), রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদদের বিষয়ে ছাড় দিতে রাজী নয়, অন্যদিকে রওশন এরশাদও তার দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধাদের রেখে কোনো সমঝোতায় যেতে রাজি নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মশিউর রহমান (রাঙ্গা) দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে রওশন এরশাদ ব্রিফিং করে তার অবস্থান পরিষ্কার করবেন। আমি এসব থেকে দূরে থাকতে চাই। আমি জাতীয় পার্টির মহাসচিব থেকেও বহিষ্কার হয়েছিলাম আমাকে কোনো কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়নি। মন্ত্রী ছিলাম, এমপি আছি আমার আর কী লাগবে। ‘আই এম নো কমেন্ট’।
তিনি বলেন, দল যদি নমিনেশন না দেয় তাহলে অন্যভাবে করব। আমার এলাকায় জনপ্রিয়তা আছে, মানুষ আমার সঙ্গে আছে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠায় রওশন এরশাদের অনেক অবদান ও ত্যাগ আছে। তিনি নির্বাচন করলে আমরা তাকে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করব। রওশন এরশাদ আজও (শুক্রবার) আমাকে ফোন করেছিলেন তিনি ও সাদ মনোনয়ন ফরম নেবেন বলে জানিয়েছেন। রওশন এরশাদের জন্য কোনো সময়ের বাধ্যবাধকতা নেই, তিনি যখন বলবেন তখনই মনোনয়ন ফরম দেওয়া হবে।
দল থেকে বহিষ্কৃতদের মনোনয়ন দেওয়া হবে কী না এমন প্রশ্নে জাপা মহাসচিব বলেন, যারা বহিষ্কৃত তাদের মনোনয়ন ফরম দেওয়ার সুযোগ নেই। বহিষ্কৃত কেউ চেয়ারম্যান বরাবর আপিল করলেই ফরম দেওয়ার সুযোগ হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রওশন এরশাদপন্থি এক নেতা বলেন, রওশন এরশাদ চাচ্ছেন না দলে নতুন কোনো সংকট আসুক। ইতিমধ্যে তার পক্ষ থেকে ৬-৭ জনের নমিনেশনের একটা তালিকা জি এম কাদেরকে দেওয়া হয়েছে। এখন চেয়ারম্যান যদি প্রধান পৃষ্ঠপোষকের কথা না শোনেন তাহলে বাধ্য হয়ে কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্ত রওশন এরশাদ আরও অপেক্ষা করতে চান।
এদিকে রওশন-কাদের দ্বন্দ্ব নিয়ে মুখ খুলেছেন জাতীয় পার্টির আরেক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এরশাদপত্নী বিদিশা সিদ্দিক। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমি আসলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যাত্রা পার্টির যাত্রা চলছে তো, তাই দেখছি আপাতত। তাদের চলমান শো আমি উপভোগ করছি। আমি ঠিক সময়ে কথা বলব, হাজির হব। তাই এখন কিছুই বলব না। এরশাদ সাহেব অনেক কষ্টে দল গড়ে তুলছিলেন। মানুষ দলকে ভালোবাসত এরশাদ সাহেবের কারণে। তার শ্রম আর ঘামে গড়ে ওঠা দলটাকে এখন এই দুজন একদম নষ্ট করে দিচ্ছেন। এগুলো দেখে খুব কষ্ট হয়।